ঢাকা

The Date Here

প্রচ্ছদ

/

জাতীয়

ক্ষমতা-সাম্রাজ্য-সভ্যতার অবসান কেন, কীভাবে হয়

শিশির ভট্টাচার্য্য 1 year ago

ক্ষমতা-সাম্রাজ্য-সভ্যতার অবসান কেন, কীভাবে হয়

ক্ষমতার টানাপোড়েন দক্ষিণ এশিয়ায় কিছুটা দেখা যায় বটে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আফগানিস্তানে মৌলবাদী তালেবানেরা আবার ক্ষমতায়, পাকিস্তানের অস্তিত্ব পর্যন্ত তারা হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। ভারতে মোদীকে হিন্দুত্ববাদীদের কথা আমলে নিতে হয়। বাংলাদেশেও মৌলবাদীদের সঙ্গে সরকারের একটা টানাপোড়েন আছে।

‘ভীষ্ম গেল, কর্ণ গেল, শল্য মহারথী। ঝাড়বাতি নিভে গেল জোনাকির পোঁদে বাতি!’ জাপানের ওসাকাতে অবস্থানকালে ঠাকুর পরিবারের সন্তান সন্দ্বীপ ঠাকুর নিজের পরিবারের দুরবস্থা বোঝাতে মহাভারতের প্রসঙ্গ টেনে ওঁর জ্যাঠামহাশয়ের কাছে শোনা এই শোলকটি শুনিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে আমি নিজে একটি চারলাইন লিখেছিলাম—‘মাঝি অতিরিক্ত হলে ডুবে যায় নৌকা। অতিরিক্ত নেতাভারে মঞ্চ ভেঙে ব্যাকা। উৎখাত করিতে পারে, হেন শক্তি নাই। অতি দর্পে হত লঙ্কা! কেন ভুলে যাই?’ যে কোনো ক্ষমতার অবসানে এই ‘অতি’-র একটা ভূমিকা আছে বৈকি।

বরফযুগ শেষ হয়ে পৃথিবী উষ্ণ হতে শুরু করেছে কমবেশি ১৪ হাজার বছর আগে। এই যুগটাকে বলে ‘হোলোসেন’ যুগ। সভ্যতা বলতে মোটামুটি আমরা যা বুঝি, সে ব্যাপারটা শুরু হয়েছে এই হোলোসেন যুগে, খুব বেশি হলে ছয় হাজার বছর আগে। ‘চক্রবৎ পরিবর্ততে সুখানি চ দুখানি চ’— সংস্কৃত প্রবাদ। সুখ এবং দুঃখের মতো ক্ষমতা এবং সভ্যতাও চক্রাকারে সৃষ্টি হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে আজ পৃথিবীর এ প্রান্তে, কাল ও প্রান্তে। মিশরীয় সভ্যতা, রোমান সভ্যতা, আরব সভ্যতা, মায়া সভ্যতা সবই আগে পরে ধ্বংস হয়েছে। গড়ে ওঠা এবং ধ্বংস হওয়া উভয়েই ক্ষমতা ও সভ্যতার অতি স্বাভাবিক ভবিতব্য।

প্রশ্ন হতে পারে, সভ্যতা-ক্ষমতা-সাম্রাজ্যের অবসান কেন হয়? অহংকারের কারণে নায়ক রামের হাতে ভিলেন রাবণের মৃত্যু হয়েছিল, বলা হয়েছে বটে রামায়ণে কিংবা লোককথায়। অনেকে মনে করে, সভ্যতা বা সাম্রাজ্যের শুরুতে সবকিছু ভালো থাকে, মানুষ সৎ, চরিত্রবান থাকে। ধীরে ধীরে মানুষ অসৎ হয়ে ওঠে। ধর্মীয়, নীতিশাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধারণার একটা ভিত্তি হয়তো আছে, তবে কোনো সাম্রাজ্যের অবসানের অধিকতর যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজলে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।

ফরাসি লেখক শাতোব্রিয়ঁ লিখেছেন, একটি জাতির জীবনে ক্রমানুসারে তিনটি পর্যায় আসে: ১. শ্রেষ্ঠত্ব (Superiority), ২. সুবিধা (Privilege) ও ৩. অহমিকা (Vanity)। তার পরেই তার পতন শুরু হয়ে যায়। পঞ্চম শতকের শুরুতে রোমান সাম্রাজ্যের যখন পতন হয়েছিল, তখন রোমানদের চরিত্র বলে কিছু ছিল না। তারা দায়িত্বহীন হয়ে পড়েছিল এবং কর্তব্য ভুলে গিয়েছিল। আরেক জায়গায় শাতোব্রিয়ঁ বলেছিলেন, ‘একটি প্রজন্ম যখন তার চিন্তাভাবনা, জীবনাচরণ, শিক্ষা ইত্যাদি পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত করতে ব্যর্থ হয়, তখনই সাম্রাজ্যের, সভ্যতার পতনের সূত্রপাত হয়।’

সাম্রাজ্যের প্রশাসন দুই রকমের হতে পারে: পেঁয়াজ এবং রসুন। পেঁয়াজের কেন্দ্রটা থাকে ভেতরে এবং চারপাশে কমবেশি সমানভাবে পরতের পর পরতজুড়ে শরীর গড়ে ওঠে। রসুনের কোয়াগুলো স্বাধীন থাকে, যদিও ওপরে এক জায়গায় আটকে থাকে সবগুলো কোয়া। পেঁয়াজ পচে গেলে পুরোটা বা অনেকটাই ফেলে দিতে হয়। পক্ষান্তরে রসুনের সব কোয়া কিন্তু একসঙ্গে পচে না।

ফাঁরাওদের মিশর এবং গ্রীক সাম্রাজ্য বিভিন্ন ‘নোম’ বা ‘সত্রাপি’-তে বিভক্ত ছিল রসুনের মতো। বিকেন্দ্রীভূত প্রশাসন প্রাচীন মিশরীয় এবং রোমান সাম্রাজ্য বা সভ্যতা দীর্ঘজীবী হবার অন্যতম কারণ ছিল কিনা তা ঐতিহাসিকেরা বলবেন। পক্ষান্তরে আরব এবং অটোমান উভয় সাম্রাজ্যে প্রশাসন কেন্দ্রীভূত ছিল পেঁয়াজের মতো। অটোমান সাম্রাজ্য অবশ্য আরব সাম্রাজ্যের তুলনায় দীর্ঘজীবী হয়েছিল। দেড় হাজার বছর আগে রোমের পতন হলেও, সারা পৃথিবীর প্রশাসনে রোমান সাম্রাজ্য কিন্তু অদ্যাপি বহাল। বাংলাদেশের ঔপনিবেশিক প্রশাসন মূলত রোমান প্রশাসনই, তবে অধিকতর কেন্দ্রীভূত, এই যা পার্থক্য।

নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারা সাম্রাজ্য ধ্বংসের একটা কারণ। যেমন ধরুন, বারুদ ও কামানের কারিগরেরা নাকি প্রথমে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাটের কাছে এসেছিল তাদের প্রযুক্তি বিক্রি করতে। সম্রাট এই নতুন প্রযুক্তিতে আগ্রহী হননি কয়েকটি কারণে। প্রথমত, কয়েক শ বছর ধরে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য অপরাজিত থাকার কারণে সম্রাটের মনে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস জন্মে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল নগরীর চারদিকে খুব ভালো প্রাচীর ছিল। ক্যাটাপাল্ট দিয়ে পাথরের গোলক ছুঁড়ে ওই দেয়াল কিছুটা ভাঙা গেলেও পুরোপুরি ধ্বংস করা যেত না। তৃতীয়ত, লোহার বড় কামান বানানোর জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থের সঙ্কট ছিল। চতুর্থত, রোমানদের হাতে ছিল (আধুনিক নাপাম বোমার মতো) ‘গ্রীক ফায়ার’। নৌযুদ্ধে পানির ওপর ছড়িয়ে যাবার মতো আগুন জ্বালানোর এই প্রযুক্তি ওই যুগে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য ছাড়া আর কারও কাছে ছিল না।

তুর্কিদের আর্থিক সামর্থ্য রোমানদের তুলনায় অবশ্যই কম ছিল। কিন্তু তবুও কামান ও বারুদের প্রযুক্তি গ্রহণের সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছিল, কারণ তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল এবং তারা হয়তো এই যুদ্ধপ্রযুক্তির ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিল। সত্য বটে, মধ্যযুগের রণনীতি ছিল প্রাচীর ও পরিখানির্ভর। কিন্তু কামানের গোলার সামনে কোনো প্রাচীরই টিকতে পারেনি। পূর্ব রোমানরা বুঝতে পারেনি যে মধ্যযুগের প্রথম পর্ব শেষ হতে চলেছে এবং সেই সঙ্গে মধ্যযুগের প্রথম পর্বের যুদ্ধপ্রযুক্তি। তীর-ধনুক-তলোয়ারের যুগ শেষ হয়ে বারুদ যুগ শুরু হলো বলে। তুর্কিরা যুদ্ধপ্রযুক্তিতে নতুন বিনিয়োগের ঝুঁকি নিয়েছিল পঞ্চদশ শতকে এবং এর পর প্রায় ৫০০ বছর ধরে তারা তাদের বিনিয়োগের সুফল পেয়েছিল। উপযুক্ত সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তুর্কিরা এবং এর ফলে অটোমান সাম্রাজ্য টিকেছিল বিংশ শতকের ত্রিশের দশক পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, অদ্যাবধি যুদ্ধের ক্ষেত্রে বারুদ যুগই কিন্তু কমবেশি চলছে সারা পৃথিবীতে– তালেবান থেকে শুরু করে রুশ-মার্কিন সকলেই বারুদ দিয়েই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

স্যার কেনেথ ক্লার্ক সাম্রাজ্য ধ্বংসের দুটি কারণ দেখিয়েছেন: ১. ভয় এবং ২. ক্লান্তি। বহিরাক্রমণ, মহামারী, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয় সব সময়েই ছিল। ঈশ্বরের অভিশাপের ভয়ও ছিল। ঈশ্বরের ভয়ে তটস্থ হয়ে মানুষ নিজেকে রক্ষার উপায় না খুঁজে হাত-পা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে, মন্দিরে-মাজারে ধর্না দেয়—এমনটা এখনও দেখা যায়। ২০২০-২১ সালে করোনা মহামারীর সময় কোভিড থেকে নিরাময় হতে কিছু লোক থানকুনি পাতা, কালিজিরা খাওয়া এবং প্রার্থনা করার উপদেশ দেয়নি কি? সবাই এদের মতো হলে করোনার টিকা আর আবিষ্কার হতো না। হরপ্পা-মোয়েনজোদারোর লোক যখন দেখছিল, কিছুদিন পর পরই বন্যা হচ্ছে এবং তাদের কিছুই করার নেই, তারা আশা ছেড়ে দিয়ে হয়তো এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। জনগণ শুধু নয়, সাম্রাজ্যের চালকেরাও এ ধরনের সমাধান-অযোগ্য ভীতিকর পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে, এমনটা ইতিহাসে নাকি দেখা গেছে।

এক তাল মোমে আগুন লাগিয়ে দিলে বেশিক্ষণ জ্বলে না, শুধু এক টুকরো সুতায় আগুন ধরিয়ে দিলে তো আরও কম সময় জ্বলে। দুই ক্ষেত্রেই আলোর পরিমাণ সামান্য। মোমকে একটা ছাঁচে ফেলে মাঝখানে একটা সুতা ঢুকিয়ে দিয়ে মোমবাতি বানাতে পারলে বেশিক্ষণ ধরে এবং বেশি পরিমাণে আলো পাওয়া যায়। হজরত মুহম্মদ (স.) আরব জাতিকে ইসলামের সুতায় ঐক্যবদ্ধ করে পৃথিবীর অনেকখানি আরবদের দখলে এনেছিলেন। পরে অবশ্য আরবেরা জ্ঞানচর্চাও করেছিল, রোমান বা গ্রীকদের মতো। কিন্তু উমাইয়া এবং আব্বাসীয়—উভয় সাম্রাজ্যের কোনোটিই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

কনস্ট্যাটিনোস পেত্রু কাভাফি (১৮৬৩-১৯৩৩) নামে এক গ্রীক কবি তাঁর কবিতায় নিজের জন্মস্থান আলেকজান্দ্রিয়া শহরের একটি কাল্পনিক ঘটনার উল্লেখ করেছেন। মধ্যযুগে আলেকজান্দ্রিয়ার লোকজন একবার ভয় পাচ্ছিল, বর্বররা এসে তাদের শহর আক্রমণ করবে। বহুদিন সুখে ও নিরাপদে বসবাস করতে করতে আলেকজান্দ্রিয়ায় লোকজন নিজেদের রক্ষা করার যোগ্যতা ও উদ্যম হারিয়ে ফেলেছিল। তারা ভেবেছিল, বর্বরদের হাত থেকে বাঁচার উপায়ই নেই, সুতরাং পালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল সবাই। কিন্তু শেষ অব্দি কোনো কারণে বর্বরেরা আসেনি। বর্বর-আক্রমণ হবে বলে লোকে ভয় পাচ্ছিল বটে, কিন্তু আক্রমণ না হওয়াতেও লোকে বিরক্ত হলো, কারণ ভালো থাকতে থাকতে, সুখে জীবন কাটাতে কাটাতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বর্বর আক্রমণ হলে তাও জীবনে কিছুটা নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য আসত। শান্তি ও নিরাপত্তাও মানুষকে ক্লান্ত করে। এই ক্লান্তি, পরিশ্রান্ত হয়ে পড়া সাম্রাজ্য ধ্বংসের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন স্যার ক্লার্ক তাঁর ‘সভ্যতা’ শীর্ষক পুস্তকে।

মহাভারতের একটি গল্প বলি। দ্রৌপদী ছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী। একবার দ্বারকায় বেড়াতে গিয়ে কৃষ্ণের বোন সুভদ্রাকে পছন্দ হয়ে গেল অর্জুনের। কৃষ্ণও সেই প্রেমে আশকারা দিলেন রাজনৈতিক কারণে। মন্দিরে যাবার সময় অর্জুন সুভদ্রাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেন। নবদম্পতি যখন খাণ্ডবপ্রস্থে ফিরে এলেন, তখন অর্জুন সুভদ্রাকে গোপবালিকার বেশ পরিয়ে হাজির করলেন দ্রৌপদীর সামনে। দ্রৌপদীকে খুশি করার জন্য বললেন: ‘তোমার জন্যে এই নতুন দাসীটি এনেছি।’ দ্রৌপদী তো আগেই সব খবর জেনে গিয়েছিলেন। কৃত্রিম কোপ দেখিয়ে তিনি জবাব দিলেন: ‘নতুন বন্ধন, নতুন গিঁট যখন পড়ে, পুরনো বন্ধন, পুরনো গিঁট নিজে থেকেই আলগা হয়ে যায়।’

শাসনও অনেকটা বন্ধনের মতোই। মানুষ এক বন্ধনে, এক শাসনে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে যায়, এক খাবার খেতে খেতে মুখ মেরে আনার মতো। হিন্দিতে যেমন বলে, ‘ঘরকা মুরগি ডাল বরাবর’। অনেকটা স্বাদ বদলাবার জন্যই মানুষ নতুন বন্ধন, নতুন শাসন কামনা করে। সাম্রাজ্য নিজে থেকে ধসে যাবার পেছনে মানুষের মনে নতুনত্বের এই আকাঙ্ক্ষা একটি নিয়ামক হতে পারে। শ্যাম বেনেগালের ‘ভূমিকা’ ছবিতে একটি সংলাপ আছে। অলীক সুখের সন্ধানে একাধিকবার সঙ্গী বদলে স্মিতা পাতিল তখন অমরীশ পুরীর সঙ্গে ঘর করছেন। সেখান থেকে যখন তিনি ফিরে যাবেন প্রাক্তন স্বামীর কাছে, অমরীশ পুরীর অসুস্থ স্ত্রী স্মিতাকে বলেছিলেন: ‘বেহেন, শ্রেফ মর্দ বদল হোগা। ঔর কুছ নেহি বদলেগা।’ শাসক বদলালে জনগণের অবস্থা যে খুব একটা বদলায় না, সেটা বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে ভালো আর কে জানে। তবুও ‘আশায় বাঁচে চাষা’।

জাপানিরা তাদের সুশি আর সাশিমিতে কাঁচা মাছ খেয়ে থাকে, আমরা জানি। সমুদ্রে মাছ ধরার পর হিমায়িত করা হয় বলে সে মাছে স্বাদ কমে যায়। এর সমাধান, ঘেরের মধ্যে মাছ চাষ। কিন্তু চাষের মাছ একটা নির্দিষ্ট জলসীমার মধ্যে তোলা খাবার খায় বলে এই মাছেরও তেমন স্বাদ থাকে না। মাছের কাটতি কমে যাচ্ছে দেখে জাপানি জেলেরা এক উপায় বের করল। সমুদ্রে ধৃত মাছ হিমঘরে না রেখে মাছগুলোকে বড়সড় অ্যাকুরিয়ামে রাখতে শুরু করল তারা। ট্রলারের মধ্যেই হিমঘরের পাশে অ্যাকুরিয়াম। অ্যাকুরিয়ামে মাছগুলো জীবিত থাকে বলে স্বাদটা একটু বেশিই হয়। মাছের বিক্রি অনতিবিলম্বে বেড়ে গেল।

কিন্তু কিছুদিন পর আবার যে কে সেই। বিক্রি আবার কমে গেল। ব্যাপার কী? মৎস্যমনস্তত্ত্ববিদেরা (এমন পেশা থাকতেও তো পারে!) ব্যাখ্যা দিলেন, অ্যাকুরিয়াম তো আর সমুদ্র নয়। সমুদ্রে টুনা মাছকে তাড়া করে হাঙ্গর। ভয়ে টুনা পালাতে চায় এবং পালাতে গিয়ে তার মাংসপেশিতে যে পরিবর্তন এবং (মানুষের জিহ্বার নিরিখে) যে স্বাদের সৃষ্টি হয়, সেই পরিবেশ অ্যাকুরিয়ামে কোথায়?

কিন্তু অ্যাকুরিয়ামে হাঙ্গর তো আর রাখা যাবে না, কারণ সেক্ষেত্রে হাঙ্গরই সব মাছ খেয়ে ফেলবে। সমাধানটা কে বের করল জানি না, জেলেরা নাকি মৎস্যমনস্তত্ত্ববিদেরা, অ্যাকুরিয়ামে হাঙ্গরের একাধিক বাচ্চা বা ছোট ছোট হাঙ্গর ছেড়ে দেওয়া হলো। এই ক্ষুদে হাঙ্গরেরা বড় টুনা মাছ খেয়ে ফেলতে পারল না, কিন্তু নিজেদের স্বভাবগুণে বা স্বভাবদোষে তাদের ভয় দেখিয়ে, খোঁচা দিয়ে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগল। এতে করে মাছেরা অ্যাকুরিয়ামে জীবন বাঁচাতে ছোটাছুটি শুরু করল এবং জাপানি জিহ্বায় মাছের স্বাদও আবার ফিরে এলো।

যে সাম্রাজ্যে দীর্ঘদিন শান্তি থাকে, সে সাম্রাজ্য আগে-পরে ভেঙে পড়ে, কারণ যেমনটা বলছেন কেনেথ ক্লার্ক, মানুষ শান্তিতে ক্লান্তি বোধ করে, বাংলায় যাকে বলে ‘সুখে থাকতে ভূতে কিলায়’। মানুষের জীবনে এবং সাম্রাজে ছোটখাটো সমস্যা যদি থাকে, তবে সেই সমস্যা সমাধান করতে করতে ব্যক্তি ও সাম্রাজ্যের টিকে থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আবার খুব বড় সমস্যা থাকাটা হচ্ছে আকুরিয়ামে বড় হাঙ্গর থাকার মতো। উমাইয়া এবং আব্বাসীয় সাম্রাজ্য কিংবা সমসাময়িক শার্লমাঈনের সাম্রাজ্য যে দুটি সব বড় সমস্যার কারণে ধ্বংস হয়েছে সেগুলো হচ্ছে বড়সড় বিদ্রোহ এবং আভ্যন্তরীণ কোন্দল। শার্লমাঈনের তিন নাতির মধ্যে ঝগড়ার কারণে তাঁর সাম্রাজ্যে প্রথম ভাঙন ধরেছিল।

ইউরোপে দুটি আলাদা শক্তি দেশ চালাত: ১. রাজা এবং ২. গির্জা। এই দুইয়ের মধ্যে জাপানের মাছধরা ট্রলারের অ্যাকুরিয়ামে হাঙ্গর আর টুনা মাছের মতো ক্ষমতার একটা টানাপোড়েন ছিল। মধ্যযুগের ইউরোপে মানুষ গির্জাকে মেনে চলত, কিন্তু গির্জা ও যাজকদের সমালোচনাও করত। বছরে এমন একটি দিন ছিল যেদিন গির্জা ও যাজকদের কার্যকলাপ নিয়ে যে কেউ তার খুশিমতো সমালোচনা-হাসাহাসি করতে পারত। ভ্যালেন্টাইন ডে ছিল এমন একটি দিন, যেদিনটা পুরুষ ও নারী তার পছন্দের মানুষের সঙ্গে কাটাতে পারত, যে মানুষটি নিজের স্বামী বা স্ত্রী হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না।

আরব ও তুর্কি খেলাফত অবশ্য কমবেশি কোরান, হাদিস ও সুন্নাহর আইন মেনেই পরিচালিত হতো। তবে ইসলামের ইতিহাসে ধর্ম ও রাষ্ট্রের এই টানাপোড়েনটা একটু জটিল। মুয়াবিয়া প্রতিষ্ঠিত উমাইয়া খিলাফত প্রায় এক শ বছর স্থায়ী হয়েছিল। সেই এক শ বছর জুড়ে মসজিদে শুক্রবারের খুৎবায় হজরত আলী এবং তাঁর বংশধরদের গালাগালি করা হয়েছে। আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠার পর এই গালাগালি বন্ধ হয়। ব্যক্তিগত ও বংশগত বিদ্বেষ ধর্মের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, পৃথিবীর আরও কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে কিনা সন্দেহ।

স্যার ক্লার্ক বলেছেন, পাশ্চাত্য বা ইউরোপীয় সভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে রাজা ও গির্জার উপরোক্ত টানাপোড়েন নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল। তবে এ কথাটাও মনে রাখতে হবে, পাশ্চাত্যে রাজার কথাই ছিল শেষ কথা। ফরাসি রাজা বা সম্রাটেরা, যেমন অষ্টম শতকের শার্লমাঈন বা অষ্টাদশ শতকের নেপোলিয়ন, পোপের কাছে আশীর্বাদ যেমন চেয়েছেন, তেমনি পোপকে তাঁরা ছেড়েও কথা বলেননি। চতুর্দশ শতকে প্রায় ৭০ বছর ভ্যাটিকানে নয়, পোপেরা থেকেছেন ফ্রান্সের আভিনিওঁ শহরে, ফরাসি রাজার ইচ্ছায়।

ক্ষমতার এমন টানাপোড়েন দক্ষিণ এশিয়ায় কিছুটা দেখা যায় বটে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আফগানিস্তানে মৌলবাদী তালেবানেরা আবার ক্ষমতায়, পাকিস্তানের অস্তিত্ব পর্যন্ত তারা হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। ভারতে মোদীকে হিন্দুত্ববাদীদের কথা আমলে নিতে হয়। বাংলাদেশেও মৌলবাদীদের সঙ্গে সরকারের একটা টানাপোড়েন আছে বটে। সরকার কখনও তাদের সামনে নতজানু হয়, কখনওবা ছাই দিয়ে জিয়ল মাছের মতো তাদের ঘাড় চেপে ধরে। এ প্রসঙ্গে বছর দশেক আগে একটি চারলাইন লিখেছিলাম— ‘পল্টনে ছিল আর্জেস বোমা, মতিঝিলে শুধু সাউন্ড। অক্ষত লাঠি, আধমরা সাপ, ভ্যাবচ্যাকা ব্লাডহাউন্ড।’

অর্থনীতিও সাম্রাজ্য ধ্বংসের একটা কারণ বটে। রাম মাছ ধরে, রহিম ধান চাষ করে। মাছ ধরতে এবং ধান চাষ করতে পরিশ্রম আছে। মাছ আর ধান হচ্ছে যথাক্রমে রাম আর রহিমের ‘প্রুফ অব ওয়ার্ক’ বা কাজের প্রমাণ। রাম তার মাছ রহিমকে দেয় এবং রহিম তার পরিবর্তে রামকে দেয় ধান। ‘কত ধানে কত মাছ’ এটা সব যুগেই কমবেশি চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। তবে কত ধানে কত মাছ বা কত মাছে কত ধান, সেটা নির্ধারণ করা সহজ ছিল না কোনো যুগেই।

এই সমস্যার সমাধানকল্পে উদ্ভাবিত হয়েছিল ধাতব মুদ্রা। চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে মুদ্রার ধাতুর দাম নির্ধারিত হতো এবং রাজা সেই মূল্য ছাপ দিয়ে লিখে দিতেন মুদ্রার ওপরে। এর পর চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হতো ধান বা মাছের মূল্য কত মুদ্রা হবে। দর্জির গজ যেমন মাপের মাধ্যম, মুদ্রাও তেমনি বিনিময়ের মাধ্যম। এদিক থেকে মুদ্রা হচ্ছে লেনদেন এবং অর্থনীতির ভিত্তি। মুদ্রায় যদি জনগণের বিশ্বাস চলে যায়, তবে কত ধানে কত মাছ হবে, সেই হিসাব গড়বড়ে হয়ে, লক্ষ লেনদেনে এক বা উভয় পক্ষের ক্ষতির ফলশ্রুতিতে অর্থনীতি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। মুদ্রা নকল করার অপরাধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা ছিল সব যুগেই, কিন্তু শাস্তি যার দেবার কথা, সেই রাজা বা সরকারই মুদ্রায় ভেজাল দিত। মুদ্রায় দুই নম্বরী করার ওস্তাদ ছিলেন রোমান সম্রাট নিরো, রোমে আগুন ধরিয়ে দিয়ে যিনি নাকি বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। ভেজাল মুদ্রা পঞ্চম শতকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ বলে দাবি করা হয়।

পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য আরও হাজার বছর টিকে থাকার অন্যতম কারণ তারা মুদ্রায় ভেজাল দেয়নি। উমাইয়া আরবেরা কখনোই এমন দুই নম্বরী করেনি। তাদের প্রচলিত মুদ্রা ‘শাহাদা’ (যাতে কলেমা শাহাদাত মুদ্রিত ছিল) উমাইয়া আমলের পরেও চালু ছিল। কিন্তু উমাইয়া সাম্রাজ্যও আরবে একশ বছরের বেশি টেকেনি।

রোমান সম্রাটদের মধ্যে অনেকেই দুই এক পুরুষ আগে বিদেশাগত অভিবাসী ছিলেন। এই সম্রাটদের পূর্বপুরুষ উপনিবেশ থেকে রোমে এসেছিল ভাগ্যান্বেষণে কিংবা দাস হিসেবে। রোমান সাম্রাজ্যে যে কারও রোমান হবার, উন্নতি করার সুযোগ ছিল। একাধিক ‘ঋষি সুনাক’ রোমান সম্রাট হয়েছেন। রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব-পশ্চিম মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার বছর স্থায়ী হবার পেছনে এই জনমিশ্রণ একটা কারণ হতে পারে।

উমাইয়া সাম্রাজ্যে অনারব, ধর্মান্তরিত মুসলমানদের তেমন সুযোগ দেওয়া হতো না। ব্রিটিশ ভারতে উচ্চপদে ভারতীয়দের নিয়োগ দেওয়া হতো না। ভারতীয়রা সে যুগে সহজে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেত বলে মনে হয় না। আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে অনারবেরা আরবদের সমান সুযোগ পেতেন, বিশেষ করে পারসিকেরা ছিলেন প্রশাসনের দায়িত্বে। আব্বাসীয় সাম্রাজ্য স্থায়ী হয়েছিল প্রায় ৫০০ বছর। যে সব সাম্রাজ্য ‘দেবে আর নেবে, মিলাবে মিলিবে’ নীতি অনুসরণ করেছে, সে সাম্রাজ্যগুলোই দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।

ঈশপের গল্পে আছে, একাধারে বোকা ও অহঙ্কারী এক ব্যাঙ গরুর চেয়ে নিজেকে বড় দেখাতে গিয়ে পেট ফোলাতে ফোলাতে বিষ্ফারিত হয়ে মারা গিয়েছিল। ‘হারাধনের আটটি ছেলে বসল খেতে ভাত। একটি পেট ফেটে ম’লো, রইল বাকি সাত।’ সব কিছুর মতো সাম্রাজ্যরও একটা সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা থাকার কথা। কুবলাই খানের বিশাল সাম্রাজ্য নাকি ভেঙেছিল অতিবিস্তৃত হয়ে গিয়েছিল বলেই। এই ঘটনা পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রেও সত্য। হয়তো বড় জিনিসের ভেঙে যাওয়াই জগতের নিয়ম। ইওরেনিয়াম ভেঙে যায়, কারণ ইওরেনিয়ামে ৯২টি প্রোটন এবং সমসংখ্যক নিউট্রন কণা থাকে। পদার্থের আইসোটোপ যেমন কার্বন-১৪ ভেঙে যায়, কারণ কাম্য পরিমাণের চেয়ে এর নিউক্লিয়াসে দুটি নিউট্রন বেশি থাকে।

আমরা দেখলাম, বিচিত্র কারণে সাম্রাজ্যের অবসান হয়। স্যার ক্লার্ক লিখেছেন, সাম্রাজ্যকে যতই শক্তিশালী, শক্তপোক্ত মনে হোক, এটি আসলে প্রকৃতিগতভাবেই ভঙ্গুর। একই কথা সত্য সরকারের ক্ষেত্রেও। ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো।’ ‘তোমারে বধিবে যে গোকূলে বাড়িছে সে।’ প্রতিটি কাঠামোর মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে থাকে ধ্বংসের বীজ।

ভাগ্য-স্বভাব-চেষ্টা– আমার মতে, তিন কারণে ব্যক্তির উন্নতি বা অবনতি হয়। সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রেও হয়তো ব্যাপারটা অনেকটা তাই। সরকার, রাজ্য বা সাম্রাজ্য টেকে, তার ভাগ্য ভালো হলে কিংবা শাসকের স্বভাব ভালো হলে কিংবা সাম্রাজ্যের অধিবাসীরা সাম্রাজ্য টেকাতে চেষ্টা করলে। অর্থাৎ এই তিন ঘরের প্রতিটিতে টিক মার্ক পড়লে সাম্রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়, যে কোনো একটিতে টিক মার্ক পড়লে সাম্রাজ্য কোনোমতে টিকে যায়। সবগুলোতে ক্রস পড়লে সাম্রাজ্য টেকা দূরে থাক, হয়তো গঠিতই হয় না।

একজন শিক্ষিত বাবরের পক্ষে সাম্রাজ্য গঠন করা সম্ভব ছিল, একজন হুমায়ুনের পক্ষে সম্ভব ছিল না। নিরক্ষর আকবরকে ‘মহান’ বলা হয়, কারণ বিভাজন নয়, তিনি মিলনের রাজনীতি করার চেষ্টা করেছেন। বাহাদুর শাহ জাফর শিক্ষিত ছিলেন, কবি ছিলেন, কাব্যের কদর করতে জানতেন, কিন্তু সাম্রাজ্য হারিয়ে নির্বাসিত হয়েছিলেন সুদূর বর্মামুলুকে। একজন চন্দ্রগুপ্তের পক্ষে যা সম্ভব ছিল, অশোকের বংশধর মহেন্দ্রের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি। একজন শার্লমাঈন যা করতে পেরেছিলেন, তাঁর পুত্র বা প্রপৌত্রেরা তা হেলায় নষ্ট করেছে। আমাদের সময়েই দেখুন না, ভারতের মতো বড়সড় একটি রাষ্ট্র বহু সমস্যার ভেতর দিয়েও সগৌরবে টিকে আছে। পক্ষান্তরে ক্ষুদ্রতর পাকিস্তান একবার ভেঙেছে, আবারও ভাঙ্গি ভাঙ্গি করছে। অন্য অনেক কাঠামোর মতো রাজ্য ও সাম্রাজ্যের গঠন, বিস্তার ও স্থায়িত্বও যে স্থান-কাল-পাত্র নির্ভর, তাতে আর সন্দেহ কী?

 

শিশির ভট্টাচার্য্য

আরও খবর

news image

তাড়াশ কেন্দ্রীয় কবরস্থান ও মাদ্রাসার ইসলামি জালসা অনুষ্ঠিত

news image

তাড়াশে জমিতে পানি সেচ দেওয়া কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ। আহত ৫

news image

তাড়াশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাঝে বাড়ন্ত ষাঁড় বাছুর বিতরণ

news image

তাড়াশে পুলিশ কনষ্টেবলের রাজসীক বিদায়

news image

তাড়াশ উপজেলা শিক্ষক- কর্মচারী  কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের  অভিষেক অনুষ্ঠিত

news image

তাড়াশে থানা পুলিশের অভিযানে ২০ জুয়াড়ী আটক

news image

বিনোদপুর- চৌবাড়ীয়া ও কুসুম্বী মহেশ্বর মহা শ্মশান সেতুর উদ্বোধন।

news image

তাড়াশে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবার সামনেই ছেলে নিহত

news image

সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের উর্ধ্বমুখি ভবনের উদ্বোধন

news image

ধর্ষণে নবম শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা, কিশোর গ্রেফতার

news image

ক্ষমতা-সাম্রাজ্য-সভ্যতার অবসান কেন, কীভাবে হয়

news image

তাড়াশে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হোসনে আরা পারভীন লাভলী