ঢাকা

The Date Here

প্রচ্ছদ

/

জাতীয়

জন্মহার কমে যাওয়া কি বিশ্বের জন্য অশনিসংকেত

নিউজ ডেস্ক 1 year ago

শিল্প বিপ্লবের পর গত আড়াই শ বছরে বিশ্বের সম্পদ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জনসংখ্যাও। ব্ল্যাক ডেথ মহামারির পর বিশ্বের জনসংখ্যা খানিকটা কমেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই শতাব্দী শেষ হওয়ার আগে জনসংখ্যা আরও কমবে। তবে তা মৃত্যুর জন্য নয়, জন্মহারে ভাটা পড়ার কারণে।

পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে নারীদের গর্ভধারণের হার ও শিশু জন্মের হার ধসে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। বিশ্ব অর্থনীতি এখন অনেকটাই ঝুঁলে আছে শিশু জন্মহারের ওপর।

২০০০ সালের দিকে বিশ্বে একজন নারী গড়ে ২ দশমিক ৭জন শিশু জন্ম দিতে পারতেন। এখন তা কমে ২ দশমিক ৩জনে নেমে এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীদের প্রজননহার ক্রমশ কমছে।

বর্তমানে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি জনসংখ্যা রয়েছে শুধু ভারত ও চীনে। তবে অনেক দেশে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে জাপান, ইতালি, মেক্সিকো ও থাইল্যান্ড। গবেষণা বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মানুষের অর্ধেকের বেশির বয়স হবে ৪০ এর ওপর। যেহেতু বয়স্ক মানুষেরা মারা যাচ্ছেন এবং নতুন শিশুর জন্ম হচ্ছে না, সেহেতু মোট জনসংখ্যা কমে যাওয়াই স্বাভাবিক।

জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, আফ্রিকার দেশগুলোতেও প্রজননহার দ্রুত কমছে। পরিবেশবাদীরা যাই বলুন না কেন, বিশ্বের জনসংখ্যার এই দ্রুত সংকোচন অবশ্যই সমস্যা তৈরি করবে।

বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই বয়স্ক মানুষদের পেনশন বহন করা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

নারীদের প্রজননহার কমে যাওয়াতে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে, সেটি হচ্ছে, কর্মজীবী ও পেনশনভোগীদের নিম্ন অনুপাত। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অল্প বয়সীদের মধ্যে সৃজনশীল চিন্তাক্ষমতা বেশি থাকে বলে তাঁরা নতুন উপায়ে যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু যেসব দেশে বয়স্ক মানুষের আধিক্য, সেসব দেশে দেখা যাচ্ছে, তরুণেরা কম উদ্ভাবনশীল ও ঝুঁকি নিতে কম আগ্রহী।

সুতরাং সব সঙ্কটের মূলে আসলে নারীদের প্রজননহার কমে যাওয়া। উদাহরণ হিসেবে চীনের কথা বলা যায়। দেশটিতে একদিকে ধনী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে তাদের সন্তান জন্মদানের প্রবণতা কমছে। চীনের মানুষেরা কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে একটা ভারসাম্য রক্ষা করতে চান। যারা এটি করতে পেরেছেন, তারা তুলনামূলকভাবে ভালো আছেন।

রক্ষণশীল চীনারা মনে করেন, নারীদের প্রজননহার কমে যাওয়াই হচ্ছে সমাজ ধসে পড়ার একমাত্র কারণ। তারা মনে করেন, পুরোনো ঐতিহ্যগত পারিবারিক মূল্যবোধের দিকেই চীনের মানুষদের ফিরে আসা উচিত।
অন্যদিকে উদারপন্থী চীনারা বলেন, অভিবাসনকে আরও উৎসাহিত করা উচিত। বিশ্বের অনেক ধনী দেশে অভিবাসন রেকর্ড শীর্ষ ছুয়েছে। এর মাধ্যমে দেশগুলো তাদের শ্রমিক ঘাটতি পূরণ করতে পারছে। তবে সারা বিশ্বেই যদি নারীদের প্রজননহার হ্রাস পায়, তাহলে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পৃথিবী তরুণ শ্রমিক সংকটের মধ্যে পড়বে।

এই সঙ্কটের একটি সম্ভাব্য সমাধানের কথাও অবশ্য বলেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা মনে করেন, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর উচ্চ জন্মহার তরুণ শ্রমিক সঙ্কটের ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ করে দেবে।

চীনের দুই-তৃতীয়াংশ শিশু গ্রামে বাস করে। এদিকে ভারতেও প্রায় দৃই-তৃতীয়াংশ তরুণ (যাদের বয়স ২৫ থেকে ৩৪) উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন না। আফ্রিকাতেও বেকার তরুণদের সংখ্যা বাড়ছে। এরাই বিশ্বের ধনী দেশগুলোর শ্রমিক সংকট কমাতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সুতরাং জনসংখ্যা যতই কমুক, বিশ্বকে এই তরুণ-তরুণীদের নিয়েই কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে এটিও মনে রাখতে হবে, হু হু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান ঘটছে। এতে সংকুচিত হতে পারে চাকরির ক্ষেত্র। সেক্ষেত্রে বেকারত্ব আরও বাড়তে পারে। সুতরাং আগামী দিনগুলোতে যে পরিমাণ বেকার তৈরি হবে বিশ্বে, সেই পরিমাণ কর্মক্ষেত্র থাকবে না।

একদিকে বলা হচ্ছে, জন্মহার কমে যাওয়ায় শ্রমিক সঙ্কটে পড়বে বিশ্ব, অন্যদিকে বলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানে কাজ পাবে না মানুষ, বাড়বে বেকারত্ব। এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কোনটি শেষ পর্যন্ত ফলবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এটুকু নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, জন্মহার কমে যাওয়া মানে পৃথিবী থেকে মানুষের প্রতিভার পরিমাণও কমে যাওয়া। এবং এটি যে একটি সমস্যা, তা কেবল মানব-প্রতিভাই উপলব্ধি করতে পারে।

দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন মাজেদুল ইসলাম

নিউজ ডেস্ক